কলকাতা সংবাদদাতা:
করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় মঙ্গলবার সারা দেশে ২০ লক্ষ কোটি টাকার ‘আত্মনির্ভর’ আর্থিক প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানান, দেশের শিল্প মহল, বণিক মহল ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থমন্ত্রক একটি সার্বিক প্যাকেজ তৈরি করেছে। দেশকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়াই সরকারের লক্ষ্য বলে তিনি ঘোষণা করেন। তিনি এদিন জানিয়ে দেন, কোনও রকম বন্ধক ছাড়াই ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং উদ্যোগগুলিকে ঋণ দেওয়া হবে। গৃহ উদ্যোগগুলিও এই সুবিধা পাবে। সেইজন্য সরকার ৩ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছে। মোট পাঁচটি পর্যায়ে তিনি প্যাকেজে সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা জানাবেন।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পরই বাংলার বিভিন্ন দলের তরফে অনেক মন্ত্রী ও নেতা মুখ খুলেছেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘এই আর্থিক প্যাকেজ মোটেও ২০ লক্ষ কোটির নয়। এই প্যাকেজ আসলে ৪.২ লক্ষ কোটির।’ তাঁর বক্তব্য, ‘তা ছাড়া এই প্যাকেজ জিডিপি–র ১০ শতাংশও নয়, ২ শতাংশ মাত্র। আগে ১.৭ লক্ষ কোটির প্যাকেজ দিয়েছে কেন্দ্র। ৪.২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি নগদও সরকার দিতে পারবে না। এই পরিমাণ প্রকৃত পক্ষে মোট জিডিপি–র ২ শতাংশ। আর ১০ লক্ষ কোটি আগেই দেওয়া হয়েছে।’ সেই টাকা সংস্থার হাতে কবে যাবে, আর মানুষই বা তা কবে পাবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অমিতবাবু।
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাঁছাছোলা ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই আর্থিক প্যাকেজকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলে সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, ‘কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজের পুরোটাই আসলে বিগ জিরো। মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী।’ তাঁর বক্তব্য, ‘আমি ভেবেছিলাম রাজ্যগুলি কিছু পাবে, কিচ্ছু দেয়নি। মানুষের হাতেও নগদ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়নি প্যাকেজে। করোনার জন্য অতিরিক্ত তো কিছুই দেয়নি সরকার।’ এদিন মমতা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনেরও সমালোচনা করেন। বলেন, ‘তাঁর এই প্যাকেজ ঘোষণার পর দেশের অর্থনীতি কোথায় যাবে, তা আমরা জানি না। বুঝতে পারছি না তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ভুল পথে চালিত করলেন কিনা! কারণ, প্রধানমন্ত্রী যে সব কথা বলেছিলেন, অর্থমন্ত্রী সম্পূর্ণ আলাদা কথা বলছেন!’
কিন্তু, মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পর মুখ খুলেছে বিজেপিও। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘টাকা ছাড়া তিনি বা তাঁর দল আর কিছুই বোঝেন না। কেন্দ্রীয় সরকার সমাজের সর্বস্তরের মানুষের উন্নতির জন্য এই প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কোনও ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠীর উন্নতির জন্য এই প্যাকেজ নয়। আগামিদিনে আরও প্যাকেজ ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তিনি সে–সব চান না। তিনি চান শুধু টাকা।’ পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যেও কোনও সমন্বয় নেই। দু’জনে এক–এক রকম কথা বলছেন!’
কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে মুখ খুলেছে সিপিএমও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী মন্তব্য করেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজের কথা শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু এই প্যাকেজের কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার কোনও ইঙ্গিতও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ভাষণে পাওয়া যায়নি।’ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘আর্থিক সহযোগিতার কথা বলে আসলে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মানুষকে বোকা বানাচ্ছে।’ পুরনো প্রকল্পগুলিই নতুন করে অর্থমন্ত্রী শুনিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।